সাফারি পার্কে বাড়ছে আফ্রিকান ওয়াইল্ডবিস্টের প্রজনন

দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব প্রদেশেই দেখা মেলে কালো প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্টের। প্রকৃতিপ্রেমী দশর্কদের বিচিত্র সবপ্রাণী সম্পর্কে ধারণা দিতে সেই আফ্রিকান ওয়াইল্ডবিস্ট প্রথমে বাংলাদেশে আনা হয় গাজীপুরের সাফারি পার্কে। এরপর ২০০৬ সালে এ প্রাণীটির দুটি বাচ্চা কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনা হয়।

গাজীপুরে রাখা ওয়াল্ডবিস্ট দম্পতির ঘরে যুগ পার হলেও এখনও কোন নতুন অতিথি আসেনি। সেক্ষেত্রে সফলতা এসেছে ডুলাহাজারা পার্কে আনা ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতিতে। তাদের ঘর আলো করে এসেছে দু’বছরে দু’টি বাচ্চা। গত সপ্তাহে আসা দ্বিতীয় বাচ্চাকে ঘিরে চরম উচ্ছ্বাস চলছে পুরো পার্ক জুড়ে।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, এ নিয়ে দুটি বাচ্চা দিল এ ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতি, যা বিরল ঘটনা। ঢাকার কাছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে একই প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্ট থাকলেও প্রজননের ক্ষেত্রে এখনও সফলতা আসেনি। চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে একবছর অন্তর ওয়াইল্ডবিস্টের ঘরে দুটি বাচ্চা প্রসবের ঘটনা রীতিমতো অবাক করার মতো।

পার্ক কর্মকর্তারা জানান, ওয়াইল্ডবিস্ট দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে। এরা তৃণভোজী। ঘাস, সবজি ও লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে। প্রতিবছর মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এই প্রাণীর প্রজনন হয়। সর্বোচ্চ ২৮ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে ওয়াইল্ডবিস্ট। এই বন্য প্রাণীর গড় উচ্চতা ১ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। জন্ম নেয়া বাচ্চা পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে। তবে বয়স তিন মাস হলেই একটু একটু করে কচি ঘাস খেতে শুরু করে। প্রাপ্তবয়স্ক ওয়াইল্ডবিস্ট ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। বয়স সাত থেকে আট মাস হলেই প্রজননক্ষমতা আসে ওয়াইল্ডবিস্টের।

সাফারি পার্কের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গত বৃহস্পতিবার জন্ম নেয়া ওয়াইল্ডবিস্টের বাচ্চাটি মায়ের সঙ্গে খেলছে, মায়ের দুধ পান করছে। সদ্য জন্ম নেয়া বাচ্চাটির ওজনও স্বাভাবিক। বাচ্চাটি সুস্থ আছে।

 

তিনি আরও জানান, গতবছরও একটি বাচ্চা দিয়েছে এখানকার ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতি। এ নিয়ে ২০০৬ সালে পার্কে প্রথমবারের মতো আনা ওয়াইল্ডবিস্টের সংসারে বতর্মান সদস্য সংখ্যা চার। এর মধ্যে একটি পুরুষ, বাকি তিনটি স্ত্রী লিঙ্গের।

ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা যায়, মা ওয়াইল্ডবিস্ট তার প্রসব করা বাচ্চা নিয়ে ঝোপের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাটি মায়ের দুধ খাচ্ছে, লাফালাফি করছে। বেষ্টনীর কাছে লোকজনের উপস্থিতি টের পেলেই নিরাপত্তার জন্য বাচ্চাকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতর চলে যায় মা।

সাফারি পার্কের তত্ত্বাবধায়ক কেএম মোর্শেদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এবং গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এ দুটি জায়গায় কালো প্রজাতির ওয়াইল্ডবিস্ট রয়েছে। গাজীপুর সাফারি পার্কে এখন পর্যন্ত ওয়াইল্ডবিস্ট বাচ্চা না দিলেও পর পর দুবার বাচ্চা দিয়েছে ডুলাহাজারা পার্কের দম্পতি, যা বিরল ঘটনা।

চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক এসএম গোলাম মওলা বলেন, ওয়াইল্ডবিস্ট দম্পতিকে বাংলাদেশে আনার পর সরাসরি নিয়ে আসা হয় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা চকরিয়ার ডুলাহাজারার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে। এখানে এসে তৃণভোজী এই প্রাণী খুঁজে পায় আগের সেই আবাসস্থল। এ জন্য এখানকার পরিবেশের সঙ্গে সহজে খাপ খেয়ে যায় তারা। আর এতেই প্রজননের ক্ষেত্রে সফলতা এসেছে।